October 22, 2024, 7:31 am

বিভাগে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া

বিভাগে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও মধ্য নভেম্বরে ডায়রিয়ার দাপট অব্যাহত থাকার মধ্যেই ডেঙ্গুর চোখ রাঙানিতে জনমনে দুঃশ্চিন্তা-উদ্বেগ বাড়ছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সাথে সরকারী হাসপাতালগুলোতে আড়াই হাজারেরও বেশী ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। নগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়লেও প্রতিরোধ কার্যক্রম খুব একটা দৃশ্যমান নয় বলে সাধারন মানুষের অভিযোগ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার সবই বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রতিদিন ৬০Ñ৮০ জনেরও বেশী ডেঙ্গু রোগী বরিশাল ও পটুয়াখালীর দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ অন্যান্য সরকারী হসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। তবে প্রকৃত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশী। করোনার মত নগরীতেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এখনো সর্বাধিক। মহানগরীর শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯শ ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রায় ৮০ জন। গত ১ নভেম্বর থেকে ১৫ দিনে দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৮শ। শুধুমাত্র সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আগত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাই স্বাস্থ্য বিভাগে নথিভূক্ত হচ্ছে। এর বাইরেও বিপুল সংখ্যক আক্রান্ত বিভিন্ন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৯শ, জেনারেল হাসপাতালে আরো ৩শ জন এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২৩৫ জন, ভোলা জেনারেল হাসপাতাল সহ উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ১৭০ জন, পিরোজপুরে প্রায় সাড়ে ৪শ, বরগুনায় প্রায় ৩৫৫ জন ও ঝালকাঠীতে ৮৫ জনের মত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে বুধবার সকালে এ অঞ্চলের ৬ জেলার হাসপাতালগুলোতে ১৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে ডেঙ্গুর এ দাপটের মধ্যেও বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলা সদরগুলোর পৌরসভার পক্ষ থেকে মশক নিধনে খুব জোরালো তৎপরতা লক্ষণীয় নয়। খোদ নগরীর ড্রেনগুলোর তিন-চতুর্থাংশ ভরাট হয়ে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা রুদ্ধ হবার পাশাপাশি মশকের বংশের বিস্তার ঘটছে । নগরীর ৩০ টি ওয়ার্ডে মশা নিধনে নগর ভবনের কাছে মাত্র ১২টি ফগার মেশিন সহ কিছু হ্যান্ড স্প্রেয়ার থাকলেও ওষুধ সংকট সহ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের উদাসীনতা ও অবহেলায় মশক নিধন কার্যক্রম খুব জোরালো নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে গত মাসে আরো প্রায় ৩ হাজার সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৬৫ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে গত ১৫ দিনে আরো প্রায় ৫ হাজার আক্রান্ত রোগী হাসপাতালগুলোতে এসেছে। তবে এসব হিসেবও শুধুমাত্র সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা ডায়রিয়া রোগীদের। নদ-নদী বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার সরকারী হাসপাতালে এবার ১৫ হাজারেরও বেশী ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। পিরোজপুরে এ সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার, পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার, বরিশালে প্রায় ১২ হাজার, বরগুনাতে ৭ হাজার দুই‘শ এবং ঝালকাঠীতেও প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া রোগী গত কয়েক মাসে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ডায়রিয়া চিকিৎসায় দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজেলায় ১ হাজার সিসির প্রায় ৬০ হাজার ব্যাগ এবং ৩৮ হাজার ব্যাগ ৫শ সিসি আইভি স্যালাইন মজুদ রয়েছে। এছাড়া এন্টিবায়োটিক সহ সব ধরনের ওষুধেরও পর্যাপ্ত মজুদের কথা বলেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এদিকে সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা শনাক্তের সংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। চলতি মাসে পরিস্থিতি আরো উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। দক্ষিণাঞ্চলে গত মাসে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিলো ৮৫ জন। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে শনাক্তের সংখ্যা মাত্র ১৬ জন হলেও গত এক সপ্তাহে নতুন কোন করোনা রোগী পাওয়া যায়নি। তবে আগষ্টে এ অঞ্চলের ৪২ উপজেলায় যেখানে ১০৮ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিল, সেখানে সেপ্টেম্বরে সংখ্যাটা দ্বিগুনেরও বেশী বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ২৭৩ জনে। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিলো ৫৪ হাজার ২৪৫ জন । মারা গেছেন ৬৯৩ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৩ হাজার ১৭৬ জন। সর্বশেষ হিসেবে বরিশালে করোনা আক্রান্ত ২২ হাজার ৪৫ রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ২৩৭ জন। পটুয়াখালীতে আক্রান্ত ৭ হাজার ১৮১ জনের মধ্যে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোলাতে আক্রান্ত ৮ হাজার ৫২ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৯২ জন। পিরোজপুরে ৬ হাজার ৪৪২ জন করোনা রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ৮৩ জন। অপরদিকে সর্বাধিক মত্যুহারের বরগুনাতে ৪ হাজার ৭৮১ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠীতে ৫ হাজার ৭৪৪ জন করোনা রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com